December 26, 2024, 3:51 pm
দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
সরকারীর প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক প্রদেয় প্রণোদনার বীজ অঙ্কুরোদগম না হওয়ায় মৌসুমের শুরুতেই বড় ধাক্কা খেয়েছেন দেশের পেঁয়াজ উৎপাদনের শীর্ষ ৭ জেলার এ দুটি—রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষীরা। তারা বলছেন বিনামূল্যে চড়া যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে তাদের।
জেলা দুটির কৃষকরা বলছেন, বীজ রোপণের প্রায় তিন সপ্তাহ অতিক্রম করলেও এখন পর্যন্ত চারা গজায়নি ৯৫ ভাগ জমিতে।
কৃষি বিভাগ এ ঘটনাকে খুবই মর্মান্তিক বলে উল্লেখ করে বলেছে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।
এদিকে, আবার নতুন করে রোপণের কারনে নির্দিষ্ট সময়ে হালি পেঁয়াজ বাজারে আসবে না। এমনকি কাঙ্ক্ষিত উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হবে না বলে আশঙ্কা কৃষকদের।
দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজের বড় একটি অংশ আসে রাজবাড়ী ও ফরিদপুর থেকে। চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে ৪৩৫৬০ হেক্টর ও রাজবাড়ীতে ৩৬০০০ হাজার জমিতে। মোট ৭৯২৬০ হেক্টর জমিতে রোপনের জন্য বীজের প্রয়োজন ছিল ২৭০০০ টন।
জেলা দুটির বীজ প্রত্যয়ন বিভাগের তথ্য মতে, জেলা দুটিতে বিএডিসি বীজ ভান্ডার থেকে ৯ টন এই পেঁয়াজ বীজ সরবরাহ করেছিল। দুটি জেলায় ৯ হাজার ২০০ চাষী এই বীজ সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে রাজবাড়ীতে ৪০০০ ও ফরিদপুরে ৫ হাজার ২০০ কৃষক এই বীজ সংগ্রহ করে রোপণ করেছিল। সবই ছিল তাহেরপুরী ও বারি-৪ ব্রান্ডের বীজ।
কৃষি বিভাগ বলছে, এ বীজ ফরিদপুরে ২০ শতাংশ জমিতে অঙ্কুরোদগম হলেও রাজবাড়ীতে ৯৫ শতাংশই অঙ্কুরোদগম হয়নি।
অন্যদিকে, নিজস্ব ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য উৎস থেকে কৃষকরা বাকি প্রায় ১১০০০ হাজর টন বীজ সংগ্রহ করেছে।
কৃষকরা বলছেন, অন্য বীজে কোন সমস্যা হয়নি। সদস্যা তৈরি করেছে বিএডিসির বীজ।
সরেজমিন রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কালিতলা এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বিএডিসির বীজ সঠিক নিয়মে রোপণ করা হলেও অনেকের খেতে একটি বীজও গজায়নি। সাধারণত রোপণের এক সপ্তাহের মধ্যে বীজ অঙ্কুরোদ্গম হয়ে থাকে। কিন্তু এ বছর ২০ দিন অতিবাহিত হলেও চারা গজায়নি।
কৃষক ইয়াকুব আলী জানান, বপন করার পর তিন সপ্তাহ পার হলেও একটি বীজও গজায়নি। পেঁয়াজ আবাদের জন্য তিনি ৫০ হাজার টাকা দিয়ে দুই বিঘা জমি লিজ নিয়েছেন। তিনি জানান, আবার নতুন করে বীজ সংগ্রহ করে চারা উৎপাদন করতে গেলে তিনি পিছিয়ে পড়বেন প্রায় ১ মাস। যেখানে অন্য চাষীরা চারা রোপণ করতে শুরু করবেন সপ্তাহের মধ্যে।
কৃষকরা জানান, এক কেজি বীজ থেকে ভালো চারা জন্ম নিলে ৫০ শতক জমিতে আবাদ করা যায়। অনেককেই চারা সংগহ্রে বাড়তি খরচ গুণতে হবে যেখানে বিএডিসির বীজ ছিল বিনামূল্যে।
বিয়য়টি স্বীকার করে নিয়েছেন বিএডিসির কর্মকর্তারা। বীজ অঙ্কুরোদ্গম না হওয়ার কারণ জানতে মাঠ পরিদর্শন করেছে কৃষি বিভাগ ও জেলা বীজ প্রত্যয়ন কার্যালয়।
এ বিষয়ে রাজবাড়ী জেলা বীজ প্রত্যয়ন কর্মকর্তা মাসহিদুর রহমান জানান, বারি-৪ শতকরা ৩-৪ শতাংশ ও তাহেরপুরি ৪-৫ শতাংশ গজিয়েছে। এটা কারো কাম্য ছিল না। কৃষকের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে আমরা সুপারিশ করেছি।’
পেঁয়াজ উৎপাদনের দিক থেকে ফরিদপুর বাংলাদেশে দ্বিতীয়। এখানে প্রণোদনা পাওয়া বীজের কোথাও কোথাও শতকরা ৮০ শতাংশ বীজই অঙ্কুরিত হয়নি। অবশ্য কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন এটি মোটেও সন্তোষজনক নয়।
সালথা উপজেলার কৃষক মতিউর রহমান লাল্টু জানান, সেিড় তিন বিঘা (১০৫ শতাংশ) জমিতে পেয়াঁজ রোপণের লক্ষ্য ছিল তার। বাইরে থেকে এখন তাকে চড়া দামে চারা ক্রয় করতে হবে। সারা বছর পেয়াঁজ বিক্রি করেই আমার সংসার চলে।’
যোগযোগ করা হলে নগরকান্দা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তিলোক কুমার ঘোষ বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের কাজ শুধু বিতরণ করা। বীজ সরবরাহ করেন বিএডিসি (বীজ বিপণন) কর্মকর্তারা। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দায়িত্বও তাদের।’
ফরিদপুর বিএডিসির উপ-পরিচালক কামরুল হক জানান, ‘বেশির ভাগ বীজই অঙ্কুরোদ্গম হয়নি। এতে কৃষকের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেণ, ‘বীজের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
এই কর্মকর্তা দাবি করেন, সার্বিক উৎপাদন ব্যাহত হবে না। বীজতলা নষ্ট হয়েছে, খেত নষ্ট হয়নি। তিনি জোর দেন, কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিলে তারা অন্য উৎস থেকে বীজ কিনে আবার রোপ করবেন। এটাই এখন জরুরী বলে তিনি জানান।
Leave a Reply